নবগঠিত নগর যুবদলে ভাঙ্গণের সুর

নবগঠিত নগর কমিটি নিয়ে খুলনা যুবদলে ভাঙ্গণের সুর বেজে উঠেছে। ইতিমধ্যেই নগর কমিটির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু দলের প্রাথমিক সদস্যসহ নগর বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকেও পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠনের সাবেক ও বর্তমানে কমিটির একাংশ। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি বাতিল করে যোগ্য, ত্যাগী, পরিক্ষিত ও দুঃসময়ের সহযোদ্ধাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় কঠিন কর্মসূচি ঘোষণার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, যুবদলের জেলা কমিটি পরিবর্তনের দাবিতে জেলা বিএনপি’র দু’ শীর্ষ নেতা ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা দলীয় চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করেও কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু আপাতত : তাদের আশা অপূরণই থেকে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু উল্লেখ করেন, খুলনা যুবদলের তৃণমূলের কর্মীরা দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল। খুলনা বিএনপির অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রতি উদ্যোগও গ্রহন করা হয়। গত ২৪ এপ্রিল মহানগর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় অঙ্গদলগুলোর কমিটি গঠনের জন্য সাধারণ সম্পাদক ও কেসিসির মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে প্রধান করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। যে কমিটি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও শ্রমিক দলের কমিটি গঠনে উদ্যোগ নেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। তারা কাজ শুরুর আগেই কেন্দ্র থেকে আচমকা যুবদলের একটি কমিটি ঘোষণা করা হলো। গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ দলের কমিটি ঘোষণার পূর্বে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে মতামত গ্রহনের কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি কেন্দ্র। তাদের এই সিদ্ধান্ত খুলনা যুবদলের তৃণমুলের কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জীবনবাজি রেখে যারা রাজপথের আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, মামলার আসামি হয়েছে, কারা নির্যাতন ভোগ করেছে, দিনের পর দিন কাটছে আদালতের বারান্দায়- নবঘোষিত মহানগর যুবদলের এই কমিটিতে তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়া, সুবিধাবাদী ও বিতর্কিত ব্যাক্তিরা। খুলনা যুবদলের নেতৃত্ব প্রদানের মতো কোন যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্মীবাহিনী যাদের সাথে নেই।
সম্মেলনে আরও বলা হয়, কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মাহবুব হাসান পিয়ারুকে, যার সর্বোচ্চ রাজনৈতিক যোগ্যতা একটি থানা কমিটির সভাপতি হওয়া। মহানগরের নেতৃত্ব যিনি কোন কালেই দেননি। এমন একজন ব্যক্তি কিভাবে কোন যোগ্যতায় নগর যুবদলের মতো একটি বিশাল ইউনিটের নেতৃত্ব দেবেন তার জাবা কেন্দ্রীয় নেতাদের দিতে হবে। সাধারণ সম্পাদক চৌধূরী নাজমুল হুদা সাগর প্রায় এক দশক যাবৎ খুলনার কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না। তার একটিই যোগ্যতা, যিনি নিয়মিত আমেরিকা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত ঘুরে বেড়ান এবং সেখানে বিএনপির এক শ্রেণীর নেতাদের সাথে আতাতের সম্পর্ক স্থাপন করেন। যার প্রমাণ, যুবদলের কমিটিতে তার মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তির সাধারণ সম্পাদক হওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি চৌধূরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, জি এম রফিকুল হাসান ও কাজী নেহিমুল হাসান নেহিম এবং সাবেক নেতা আতিকুর রহমান তিতাস, আলহাজ সাব্বির হোসেন, জাহিদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম সান্টু, জাহিদুর রহমান রিপন, দিদারুল ইসলাম লাভলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে যুবদলের প্রাথমিক সদস্যসহ নগর বিএনপির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু। তিনি বলেন, যে দলে রাজপথের সক্রিয় কর্মীদের মূল্যায়ন নেই, আজ থেকে আর সে দলের সঙ্গে নেই। তারমত অনেকেই পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন বলেও জানান যুবদলের এই ত্যাগী নেতা। এর আগে শুক্রবার বিকেলে একই দাবিতে তারা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে নবগঠিত কমিটিকে প্রত্যাখান করেন।
অপরদিকে, যুবদলের জেলা কমিটি পরিবর্তনের দাবিতে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এসএম শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান বৃহস্পতিবার কমিটি ঘোষণার খবর পেয়েইে ঢাকায় রওনা হন। ওই রাতেই তারা দলীয় চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করেও কমিটি বাতিলের দাবি জানান। কিন্তু আপাতত : দলীয় চেয়ারপার্সন তাদের হতাশ করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলা যুবদলের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি এসএম শামীম কবির জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির প্রচার সম্পাদক। ২০১৫ সালের কঠোর আন্দোলনে অনুপস্থিত। কোন কর্মসূচিতে তাকে পাওয়া যায়নি। একটিও মামলা নেই, একদিনও জেল খাটেনি। ২০০৩-০৪ সালে খুলনা জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিল। সে সময় বিভন্ন থানা ও ইউনিট কমিটি গঠনে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ। পিতা সাহেব আলী সানা দাকোপের কৃষক লীগের সভাপতি। পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। শামীমও সরকারি দলের নেতাদের সাথে আতাতের সম্পর্ক রেখে চলে।
সিনিয়র সহ সভাপতি এস এম এ কাফি সখা মাদক স¤্রাট। ইয়াবা ব্যবসায়ী। চারবার মাদক সহ গ্রেফতার। তিনবার ইয়াবা ও একবার ফেনসিডিল। মাদকের অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছিল। মহানগরের রাজনীতি করতো। জেলায় থানা কয়টি ঠিকমতো জানেওনা।
সাধারণ সম্পাদক ইবাদুল হক রুবায়েদ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বর্তমান খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থাকার পরেও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এতে পদ বঞ্চিত হয়েছেন দীর্ঘদিন যুবদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বহু নেতা।
প্রথম যুগ্ম সম্পাদক নাদিমুজ্জামান জনি রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ। জেলা বিএনপির এক নেতার পকেটের লোক হিসেবে পরিচিত। কোন মামলা নেই। জেল খাটেনি। আন্দোলন সংগ্রামে কোখাও তাকে পাওয়া যায়নি।
জাবির আলী কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ সাবেক এই ছাত্রদল নেতা পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তার দাবি, পলায়নপর, আপোসকামী, কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ও বিতর্কিত এ সব ব্যক্তিদের সাথে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।
এদিকে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে শুক্রবার বিকেল ৩ টায় কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে যুবদলের বিক্ষুব্ধ একটি অংশ। তারা বিভিন্ন প্যানা ও প্লাকার্ডে আগুন ধরিয়ে শ্লোগান দেয় ও কমিটি বাতিলের দাবি জানায়। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন হাফেজ আবুল বাশার, চৌধুরী হাসানুর রশিদ মিরাজ, মশিউর রহমান যাদু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল কেন্দ্র থেকে নগর যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিটিতে মাহাবুব হাসান পিয়ারু সভাপতি, নাজমুল হুদা চৌধূরী সাগর সাধারণ সম্পাদক, শফিকুল ইসলাম হোসেন সহ-সভাপতি, জি এম রফিকুল ইসলাম রফিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কাজী নেহিবুল হাসান নেহিমকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। এর মধ্যে কমিটি প্রত্যাখান করেছেন খোদ নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম হোসেন, রফিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জি এম রফিকুল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী নেহিবুল হাসান নেহিম। অপরদিকে, জেলা শাখায় এস এম শামিম কবীর সভাপতি, ইবাদুল হক রুবায়েত সাধারণ সম্পাদক, আব্দুল¬াহ হেল কাফি সখা সহ-সভাপতি, নাদিমুজ্জামান জনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জাবির আলীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
-
গৌরব ’৭১ এর কুয়েট শাখা সংসদের কমিটির অনুমোদন
-
মৃত্তিকা হোমিও চিকিৎসালয়ের পক্ষ থেকে আওয়ামীলীগ নের্তৃবৃন্দকে করোনা ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ঔষধ প্রদান
-
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যখাত প্রবঞ্চনা
-
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত আম